২৪খবরবিডি: 'প্রায় এক মাসের ব্যবধানে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। আয়ের সঙ্গে বাড়তি ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না মানুষ। এই এক মাসে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যের সরবরাহ কমে যাওয়া ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া।'
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা যায়। রাজধানীর বাজারগুলোতে গত ৮ জুলাই ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। সেই দাম বেড়ে গতকাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছিল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। সোনালি মুরগির দাম ছিল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, গতকাল তা বিক্রি হয় ২৯৫ থেকে ৩০০ টাকায়। ডিম ডজন ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। মোটা চাল আটাশ ছিল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, সেই চাল গতকাল বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মিনিকেট চাল গতকাল বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। এক মাস আগের দামের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ভোক্তার চাহিদা ও ব্যবসায়ীদের বিক্রিও কমেছে।গতকাল জোয়ারসাহারা বাজারে কথা হয় সাধারণ নির্মাণ শ্রমিক (জোগালি) মো. হলুদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি ২৪খবরবিডিকে বলেন, 'বারবার দাম বাড়ায় আমাদের মতো মানুষের সংসার চালানোর হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে গেছে। তিন বছর আগে (২০১৯ সালে) জোগালি হিসেবে দিনে মজুরি পেতাম ৫০০ টাকা, এখন পাই ৬৫০ টাকা। তখন মোটা চালের কেজি ছিল ৩৫-৩৬ টাকা, এখন বাজারে ৫০ টাকা দিয়েও এক কেজি চাল কিনতে পারি না।'
-হলুদ মিয়া আরো বলেন, ‘সবজি, ডাল, তেলসহ সব কিছুরই দাম বেড়েছে। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বস্তিতে থাকি, ভাড়া দিতে হয় চার হাজার টাকা। তিন বছর আগে দিতে হতো দুই হাজার টাকা। এখন যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে ডাল-ভাত খেয়েও সংসার চালাতে পারছি না। আমাদের এই কষ্ট দেখার কেউ নেই।' কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী মো. আমজাদ হোসেন ২৪খবরবিডিকে বলেন, 'গত ৮ জুলাই ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছি কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়, দাম বাড়ার কারণে এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। সোনালি মুরগি ছিল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৯৫ থেকে ৩০০ টাকায়। দেশি মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকায়।' তিনি বলেন, 'মূলত দুটি কারণে দাম বেড়েছে, প্রথমত সরবরাহ কমে যাওয়া, দ্বিতীয়ত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি।'
রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের খুচরা ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম ২৪খবরবিডিকে বলেন, 'পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় গত এক মাসের ব্যবধানে খুচরায় মোটা চাল আটাশ কেজিতে সাত থেকে আট টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। চিকন চাল মিনিকেট কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। নাজিরশাইল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।' তিনি বলেন, 'চিনি কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে খোলা ৮৫ টাকা ও প্যাকেট চিনি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট লবণ কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম ডজনে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়।' রাজধানীর বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মো. সলিম উদ্দিন ২৪খবরবিডিকে বলেন, 'গত এক মাসে পাইকারি বাজারে চালের দাম মানভেদে ৫০ কেজির বস্তায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।' তিনি বলেন, 'এখন বাজারে চিকন চালের মধ্যে মিনিকেট বস্তা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৩০০ টাকা থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকায়। নাজিরশাইল চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৪৫০ টাকা থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। মোটা চাল আটাশ ও পায়জম ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫৫০ টাকা থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকায়।'
'প্রায় এক মাসের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১৩০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কাঁকরোল ও করলা কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে,
অস্থিরতা নিত্যপণ্যের বাজারে, মিলছে না সংসার খরচের হিসাব
গোল বেগুন কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকায় এবং লম্বা বেগুন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙা কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায়, পটোল, চিচিঙ্গা ও ঢেঁরস কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায়, বরবটি ১০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ওই সময়ে বাজারে টমেটো ও গাজরের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশি ছিল; গতকাল এ দুটি পণ্য কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমে কেজিতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'
গতকাল জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ২৪খবরবিডিকে বলেন, 'সবজির দাম মূলত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকেই বাড়ছে। এখন পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে পাইকারি বাজারেই কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে সবজি বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।' জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ২৪খবরবিডিকে বলেন, 'সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করার ফলেই নতুন করে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এমনিতেই মানুষ কষ্টে আছে, সামনে সাধারণ মানুষ আরো চাপে পড়বে।''
-তিনি বলেন, 'জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে যে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে তা অযৌক্তিক। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভ মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া যুক্তিসংগত বলে মনে করি না। দেশের অর্থনীতি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করেই সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের আয়-রোজগার ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।'